র ল হ য ব

hajabarala1
(লেখাটি সুকুমার রায়ের হ য ব র ল -র Caricature

বেজায় গরম । গাছতলায় দিব্যি ছায়ার মধ্যে চুপচাপ শুয়ে আছি, তবু ঘেমে অস্থির । ঘাসের উপর মোবাইলফোনটা ছিল ; ফেসবুকে ‘ফিলিং হট’ স্ট্যাটাস দেওয়ার জন্য যেই সেটা তুলতে গিয়েছি, অমনি ফোনটা বলল, ‘ম্যাও !’ কি আপদ ! ফোনটা ম্যাও করে কেন ? চেয়ে দেখি ফোন তো আর ফোন নেই, দিব্যি মোটা সোটা লাল টক্‌টকে একটা বেড়াল গোঁফ ফুলিয়ে প্যাট্‌ প্যাট্‌ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি বললাম, ‘কি মুশকিল ! ছিল মোবাইল, হয়ে গেল একটা বেড়াল ।’ অমনি বেড়ালটা বলে উঠল, ‘মুশকিল আবার কি ? ছিল কিছু জমানো টাকা হয়ে গেল দিব্যি বাতিল কাগজ । এ তো হামেশাই হচ্ছে ।’ আমি খানিক ভেবে বললাম, ‘তাহলে তোমায় এখন কি বলে ডাকব ? তুমি তো সত্যিকারের বেড়াল নও, আসলে তুমি হচ্ছ মোবাইল ফোন।’ বেড়াল বলল, ‘বেড়ালও বলতে পার, মোবাইলও বলতে পার, দেশদ্রোহীও বলতে পার ।’ আমি বললাম, ‘দেশদ্রোহী কেন ?’ বেড়াল বলল, ‘তাও জানো না?’ ব’লে এক চোখ বুজে ফ্যাঁচ্‌ ফ্যাঁচ্‌ করে বিশ্রী রকম হাসতে লাগল । আমি ভারি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম । মনে হল, ঐ দেশদ্রোহীর কথাটা নিশ্চই আমার বোঝা উচিৎ ছিল । তাই থতমত খেয়ে তাড়াতাড়ি বলে ফেললাম, ‘ও হ্যাঁ হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি ।’ বেড়ালটা খুশি হয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, এ তো বোঝাই যাচ্ছে- মোবাইলের কা, দেশদ্রোহীর লো, আর বেড়ালের ধন- হল কালোধন । কেমন, হল তো ?’ আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না, কিন্তু পাছে বেড়ালটা আবার সেই রকম বিশ্রী করে হেসে ওঠে, তাই সঙ্গে সঙ্গে হুঁ হুঁ করে গেলাম । তারপর বেড়ালটা খানিকক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলে উঠল, ‘সময় না কাটলে টাকা তুলতে গেলেই পারো।’

আমি বললাম, ‘কি করে টাকা তুলতে হয় তুমি জানো?’ বেড়াল এক গাল হেসে বলল, ‘তা আর জানিনে? গলির মোড়, বড়বাজার, এটিএম, ব্যাস! সিধে রাস্তা, পাঁচ মিনিটের পথ, গেলেই হল।‘ আমি বললাম, ‘তাহলে টাকা তোলার উপায়টা আমায় বাতলে দিতে পার?’ শুনে বেড়ালটা হঠাৎ কেমন গম্ভীর হয়ে গেল। তারপর মাথা নেড়ে বলল, ‘উঁহু সে আমার কর্ম নয়। দিমনিতাইজেশন চলছে জানোনা বুঝি?’ আমি বললাম, ‘দিমনিতাইজেশন কি? খায় না গায়ে মাখে?’ বেড়াল বলল,’তোমার নিজের মানি-তাই তুমি ইচ্ছে মত তুলতে পারছো না। সেটাই দিমনিতাইজেশন।‘ আমি বললাম, ‘তুমি টাকা তুলছ কি উপায়ে?’ বেড়াল খুব জোরে মাথা নেড়ে বলল, ‘সেটি হচ্ছে না, সে হবার যো নেই।’ আমি বললাম, ‘কি রকম?’ বেড়াল বলল, ‘সে কি রকম জানো? মনে কর, তুমি যখন যাবে এটিএমে তখন দেখবে তার সামনে একটা লোক মরে পড়ে আছে। তুমি যদি যাও স্টেট ব্যাঙ্কে শুনবে এইমাত্র টাকা শেষ হয়ে গেল। আবার এটিএমে ফিরে গেলে দেখবে শাটার নামান। কিছুতেই টাকা তোলার যো নেই।’ আমি বললাম ‘তাহলে তোমার চলছে কি ভাবে?’ বেড়াল বলল, ‘সে অনেক হাঙ্গামা। আগে হিসেব করে দেখতে হবে টাকা কোথায় কোথায় নেই; তারপর হিসেব করে দেখতে হবে টাকা কোন কোন এটিএমে থাকতে পারে; তারপর দেখতে হবে টাকা এখন কোন এটিএমে আছে। তারপর দেখতে হবে, সেই হিসেব মতো যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছবে তখন কোন এটিএমে টাকা ভরতে আসবে। তারপর দেখতে হবে —- ‘ আমি তাড়াতাড়ি বাধা দিয়ে বললাম, ‘সে কি রকম হিসেব?’ বেড়াল বলল,’সে ভারি শক্ত। দেখবে কি রকম?’ এই বলে সে একটা কাঠি দিয়ে ঘাসের উপর লম্বা আঁচড় কেটে বলল, ‘এই মনে কর কালোধন।‘ বলেই খানিকক্ষণ গম্ভীর হয়ে চুপ করে রইল। তারপর হঠাৎ আবার একটা আঁচড় কেটে বলল, ‘এই মনে কর তুমি,’ বলে ঘাড় বেঁকিয়ে চুপ করে রইল। তারপর হঠাৎ আবার একটা আঁচড় কেটে বলল, ‘এই মনে কর পেটিএম।’ এমনি করে খানিকক্ষণ কি ভাবে আর একটা করে লম্বা আঁচড় কাটে, আর বলে, ‘এই মনে কর দেশপ্রেম’ — ‘এই মনে কর মাত্র পঞ্চাশ দিন ’ — ‘এই মনে কর বাতিল এক হাজার টাকার নোট’— ‘এই মনে কর জনধন একাউন্ট’ —‘এই মনে কর দেশে আর সমস্যা নেই—’ এই রকম শুনতে শুনতে শেষটায় আমার কেমন রাগ ধরে গেল। আমি বললাম,’দূর ছাই। কি সব আবোল তাবোল বকছে, একটুও ভালো লাগে না।‘ বেড়াল বলল, ‘আচ্ছা, তাহলে আর একটু সহজ করে বলছি। চোখ বোজ, আমি যা বলব মনে মনে তার হিসেব কর। আমি চোখ বুজলাম। চোখ বুজেই আছি বুজেই আছি, বেড়ালের আর কোন সাড়া শব্দ নেই। হঠাৎ কেমন সন্দেহ হল, চোখ চেয়ে দেখি বেড়ালটা ল্যাজ খাড়া করে গ্রিল টপকে পালাচ্ছে আর ক্রমাগত ফ্যাচ ফ্যাচ করে হাসছে।
(In literature, a caricature is a description of a person using exaggeration of some characteristics and oversimplification of others. Caricatures can be insulting or complimentary and can serve a political purpose or be drawn solely for entertainment. Caricatures of politicians are commonly used in editorial cartoons, while caricatures of movie stars are often found in entertainment magazines.)
untitled

Leave a comment

Website Built with WordPress.com.

Up ↑