দাঁসায়

dsc_9914ঘুম ভাঙিয়ে দিল শব্দটা। শহরে কী যুদ্ধ শুরু হল? ছুটতে ছুটতে পৌঁছে গেলাম শব্দের কাছে। উঁহু। প্রাচীন এক  যুদ্ধের পরাজিত নায়কের কাছের মানুষরা খুঁজতে বেরিয়েছে প্রিয় বীরকে। তারই বাজনা বাজছে, আর হচ্ছে নাচ গান। একমাত্র  প্রিয় বীর জানে ঐ গানের মানে। শুনতে পেলেই বেরিয়ে আসবে। আর তারপর হবে যুদ্ধ।

যুদ্ধে হারাতে না পেরে আত্মীয়তা করলে। তোমাদের মেয়ে  ছল করে নিয়ে গেল বীর উদুরকে। তার পর থেকে উদুরের দেখা নেই। শরত এসে গেছে। তোমাদের মেয়ে এসেছে, জামাই উদুর কি এসেছে সঙ্গে?  কোন ঘরে লুকিয়ে রেখেছ  আমাদের বীরকে?

যুবকরা ময়ূরের পালকে গাছের পাতায় সেজে আড়াল করেছে নিজেদের, প্রথা ভেঙে ভিক্ষা চাইছে।  খাবার দিলেও দিতে পারে কেউ। হাত পেতে নেবে ওরা। খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে কিছু খেয়ে জিরিয়ে আবার খুঁজবে। কত হাজার বছর খুঁজছে কে জানে?

বোলপুর শহরে দাঁসায় নাচ নাচতে এসেছে সিয়ালা গোয়ালপাড়ার সাঁওতাল ছেলেরা। প্রত্যেক বছর আসে। অনেক কাল ওরা আসছে। ইতিহাস পড়াতে  আসবেও ওরা এইভাবে। ডেকে ডেকে সেই নাচ দেখছে নাতি নাতনি দাদু ঠাকুমা।

বোলপুর স্কুলবাগানের নেতাজী ক্লাব এলাকায় যে পাড়াতে ভাড়া থাকি সেই পাড়াতেই ঘুরলাম ওদের পিছু পিছু। মূলত নবমীর পর এই দাঁসায় নাচ হয়। ইদানিং উৎসব এগিয়ে এসেছে। ওরাও ভাবছে কদিন আগে থেকে খুজলে হয়তো দেখা মিলতেও পারে হারিয়ে যাওয়া বীরের।

সন্ধ্যের আগে ওরা ফিরে গেল। শান্ত হয়ে গেল পাড়া। ইতিহাসের আওয়াজ ছাপিয়ে কানে এল বাস মোটরগাড়ি টোটোর হর্ন।

Leave a comment

Website Built with WordPress.com.

Up ↑